রাজিয়া সুলতানাঃ
ন্যাশনাল ব্যাংকের গোপালগঞ্জ শাখায় দিনের পর দিন ঘুরেও আমানতের টাকা তুলতে পারছে না গ্রাহকরা। অনেকে ব্যাংক থেকে আস্থা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। গ্রাহকরা ৩০ হাজার টাকার চেক নিয়ে গেলে ৫, ১০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে ব্যাংক কতৃপক্ষ বলছে, আপাতত চলুন, আগামী সপ্তাহ থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত মাস এর পর মাস অতিবাহিত হলেও ঠিক হয়নি। অনেকদিন ধরে আমানতের টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা এখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
গোপালগঞ্জের ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সহ জেলার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও সংকট কাটাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। গোপালগঞ্জ ন্যাশনাল ব্যাংকে নিজেদের জমানো টাকা তুলতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের রনক্ষেত্র হয়। এতে ৫ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়। পুলিশের ১৬ মামলায় ১৭ হাজারেরও বেশি আসামী হওয়ায় শহর ও গ্রামের অনেক লোক পলাতক থাকায় ব্যাবসা বানিজ্যে ধস পরেছে। তাই এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকে। লেনদেন আগের থেকে অনেক কমে গেছে। গ্রাহকরা নতুন করে টাকা জমা না দেওয়ায় নগদ টাকার সংকট কাটছে না।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। টাকা না পাওয়ায় সংসারের দৈনন্দিন কার্যক্রমও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তাদের। চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানের স্কুলের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়ে গ্রাহকরা বিপাকে আছেন। কোনো কোনো ব্যাংকে তদবিরে পাঁচ/দশ হাজার টাকা মিললেও পরের সপ্তাহের আর মিলছে না। যদিও ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছে ব্যাংকের ম্যানেজার।
স্বর্ন ব্যাবসায়ী প্রদীপ জানান, আমানত রেখেছিলাম ব্যাংকে কিন্তু টাকা এখনও উত্তোলন করতে পারিনি।
ব্যাবসায়ী কায়ুম কাজী জানান, ব্যাংকে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকলেও টাকা উঠাতে পারিনি।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড গোপালগঞ্জ শাখার গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এই ব্যাংকে রেখেছিলাম। এক বছরে এক কোটি টাকা উত্তোলন করতে পারলেও বাকী ৪৫ লাখ টাকা ব্যাংক দিতে পারছে না। এতে আমার ব্যবসা বানিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে।
রুপালী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার আব্দুল হান্নান বলেন, আমি একজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। আমি নিজেও ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারতেছি না। ব্যাংকে টাকা সংকট থাকায়, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে না পারায় উত্তেজিত হচ্ছে গ্রাহকরা।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড গোপালগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মেহেদী হাসান রাজু বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সারা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। ব্যাংকে লেনদেন ভালো না থাকায় গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছি না।’ আমাদের কিছু সমস্যা ও ক্রাইসেস চলছে এটা হেড অফিসও জানে। আমরা এই মুহূর্তে কোনো এফডিআর ভাংতে দিচ্ছি না। তবে দ্র্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
Leave a Reply